প্রকাশিত: ২২/০৮/২০১৮ ৪:২৩ পিএম
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি

বিদেশ ডেস্ক ::

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি

এবার এডিনবার্গ কর্তৃপক্ষের দেওয়া খেতাব হারাতে যাচ্ছেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা ও এককালের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবর থেকে জানা গেছে, রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে তার ‘ফ্রিডম অব সিটি’ খেতাব কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অক্সফোর্ড, গ্লাসগোম নিউক্যাসেল-এর ধারাবাহিকতায় এবার এডিনবার্গ কর্তৃপক্ষ তার এই সম্মাননা কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে সু চির ক্ষেত্রে তা হবে ৭ম সম্মাননা হারানোর ঘটনা।

গত বছরের আগস্টে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রাখাইনে পূর্ব পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ওই অভিযানে জাতিগত নিধনযজ্ঞের আলামত পেয়েছে। তবে সেনাবাহিনীর সুরে ডি-ফ্যাক্টো সরকারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা সু চি রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয় আর তাদের ওপর নিপীড়নের ভয়াবহতা অস্বীকার করে আসছেন। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারেও তিনি যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার বদলে বাংলাদেশের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে আসছেন। গত বছরেই নোবেলজয়ী বর্ণবাদবিরোধী নেতা ডেসমন্ড টুটু মিয়ানমারের সামরিক ক্ষমতার সঙ্গে সু চির আঁতাতের ইঙ্গিত দেন। প্রশ্ন তোলেন উচ্চ পদে আসীন হওয়ার কারণেই সু চি নীরব কিনা। বলেন, যদি তাই হয়, তবে এই নীরবতা অনেক চড়া দামে কেনা।

জাতিগত নিধন শুরুর পরপরই একের পর এক সম্মাননা হারাতে শুরু করেন সু চি। এবার সেই ধারাবাহিকতায় এডিনবার্গের দেওয়া সম্মাননা হারাতে যাচ্ছেন তিনি। ২০০৫ সালে সু চিকে এই সম্মাননা দেয় এডিনবার্গ কর্তৃপক্ষ। মিয়ানমারে গৃহবন্দী থাকা অবস্থায় শান্তি ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছিল তাকে। সে সময় নিপীড়নের বিপরীতে সু চির শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধকে ম্যান্ডেলার ভূমিকার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছিল। তবে সু চি এখন রাষ্ট্রীয় ডি-ফ্যাক্টো ক্ষমতার অংশ হয়েও রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের বিরুদ্ধে কোনও ভূমিকা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

গত বছর নভেম্বরে এডিনবার্গ কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে সু চিকে চিঠি লেখা হয়। চিঠিতে তার অভাবনীয় নৈতিক শক্তি আর প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে তার প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সু চির পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া না পাওয়ার পর তার সম্মাননা কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এবার সু চির সম্মাননা প্রত্যাহার হলে তা হবে এডিনবার্গের ২০০ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় খেতাব কেড়ে নেওয়ার ঘটনা। এর আগে ১৮৯০ সালে বিতর্কিত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার পর সম্মাননা পাওয়া এক আইরিশ জাতীয়তাবাদীর খেতাব প্রত্যাহার করা হয়েছিল।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সেন্ট হিউ’র পরিচালনা পর্ষদ কলেজের মূল ফটক থেকে সু চির প্রতিকৃতি নামিয়ে ফেলে। অক্টোবর মাসের শুরুতে অক্সফোর্ড সিটি কাউন্সিল সর্বসম্মতভাবে সু চির ফ্রিডম অব দ্য সিটি অব অক্সফোর্ড পদক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে রাখাইনে রোহিঙ্গা মানবিক সংকটে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে অক্সফোর্ড কলেজ তাদের জুনিয়র কমন রুম থেকে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির নাম প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। সে সময় অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সেন্ট হিউ’স কলেজের শিক্ষার্থীরা কমন রুম থেকে সু চির নাম মুছে ফেলার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। অক্সফোর্ডের এই আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কলেজে সু চি পড়াশোনা করেছিলেন। নাম মুছে ফেলার সিদ্ধান্তে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযানকে সমর্থন ও রক্ষায় সু চির নীরবতা ও সহযোগিতার সমালোচনা করা হয়।

পাঠকের মতামত

ইরানের ভয়ে তটস্থ ইসরায়েল!

ইসরায়েলে বড় ধরনের ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন হামলা আসন্ন বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ...